রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবসের দিন পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন।
সোমবার দুপুরে পুরান ঢাকার চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে ছয়জন মারা গেছেন। বিকেলে উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
রাত ৮টার দিকে গুলিস্তানে ক্রেন থেকে রড পড়ে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সর্বশেষ রাত সোয়া ১১টার দিকে বনানীতে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের দেবীদাসলেন এলাকায় প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর ২টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ওই ভবন থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতরা হলেন- হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রাকেশ সরকারের ছেলে স্বপন সরকার (১৯), শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দক্ষিণ বড় কাসমা এলাকার আবুল কালাম সরদারের ছেলে ওসমান (২৫), বরিশালের মুলাদী উপজেলার টুমচর এলাকার মৃত আলম সরদারের ছেলে বিল্লাল (৩৫), একই বিভাগের হিজলা উপজেলার শংকরপাশা এলাকার মো. মোস্তফার ছেলে মোতালেব (১৬), কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তিতচর এলাকার মিজানের ছেলে মো. শরীফ (১৬) ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ আকাল বরিশ এলাকার সাত্তার হিলালুর ছেলে রুবেল (২৮)।
বিকেল সাড়ে ৫টার পর মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। এ সময় হাসপাতালের বাইরে নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। প্রত্যেকেই তাদের স্বজনের ছবি নিয়ে বারবার ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটতে থাকেন।
উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনা
রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারে থাকা পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রুবেল, ঝরণা, ফাহিমা, জান্নাত ও জাকারিয়া। তাদের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন।
জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ আধুনিক করতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে। ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হন।
সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাড়িতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। দুর্ঘটনায় হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামে নবদম্পতিও আহত হয়েছেন। তাদেরকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন শঙ্কামুক্ত।
স্বজনরা জানান, ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝরণা হলেন তার খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝরণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝরণার সন্তান। ফাহিমা-ঝরণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।
নিহতদের স্বজনরা বলছেন, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটা স্পষ্ট হত্যাকা-। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নকারি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
এদিকে, উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সোমবার রাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বনানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা
রাজধানীর বনানী ফুটওভার ব্রিজের নিচে ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তার নাম জামিল আহমেদ শুভ (২৪)। তিনি ফেসবুকভিত্তিক বাইক রিভিউ ‘বাইকবিডি’র হোস্ট। সোমবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বনানী ফুটওভার ব্রিজের নিচে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নিহত শুভর ৪-৫ জন বন্ধু। তাদের মধ্যে চিন্ময় নামে একজন বলেন, শুভ আমাদের খুব কাছের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি। বাইকের প্রতি শুভর প্রচুর ঝোঁক ছিল। এ কারণে শুভ গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেসবুকভিত্তিক মোটরসাইকেল রিভিউ বাইকবিডির হোস্ট ছিলেন।
বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এম শামসুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহ ও নিহতের মোটরসাইকেল থানায় নেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বনানী থেকে মহাখালীগামী একটি সিএনজি নিহতের মোটরসাইকেলকে ধাক্কায় দেয়। এরপর একটি বড় ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে শুভ রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। দ্রুত ঘাতক ট্রাকটি পালিয়ে যায়।
গুলিস্তানে ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫
রাজধানীর গুলিস্তানে ক্রেন থেকে পড়া রডের আঘাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন।
আহতরা হলেন- মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (৪০) ও মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৩৫), রেজাউল করিম (৩৫) জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০)ও সবুজ মিয়া (৪৫)।
শাহাবুদ্দিন ওই এলাকায় ব্যবসা করেন। জাকির হোসেন ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকরি করেন। বাকি তিনজনই ফুটপাতের ব্যবসায়ি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।